ফেনীর সোনাগাজীতে মাঝরাতে প্রেমিকাকে জন্মদিনের উপহার দিতে প্রেমিকার বাড়িতে ঢুকে চুরির অভিযোগে ধরা পড়ে ধোলাই খেলেন এক প্রেমিক। প্রেমিকার পরিবার প্রেমিক হামিদুর রহমান আজাদকে রাতে আটক করে রশি দিয়ে বেঁধে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘চোর’ উল্লেখ করে ছড়িয়ে দেয়।
রোববার (২৯ আগস্ট) রাতে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের তাকিয়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া গ্রামের তাকিয়া আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে প্রেমিক হামিদুর রহমান আজাদ ও প্রেমিকার ভাই দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দুইজনকে সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আবদুল হাইয়ের কন্যা ও এক পুত্রকে প্রায় পাঁচ বছরর আগে থেকে প্রাইভেট পড়াতেন হামিদুর রহমান আজাদ। সে সূত্রে, গত দুই বছর থেকে আবদুল হাইয়ের স্কুল পড়ুয়া কন্যার (নবম শ্রেণি) সাথে আজাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমিকার যোগসাজশে ২৯ আগস্ট রাত দুইটায় ওই ছাত্রীকে জন্মদিনের উপহার দিতে ঘরের ভেতরে ঢুকেন প্রেমিক আজাদ। প্রেমিকার পিতা আবদুল হাই ও তার ভাই দীন মোহাম্মদ টের পেয়ে আজাদকে আটক করে বেধড়ক পিটিয়ে ঘরের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। এরপর ছবি তুলে দীন মোহাম্মদের ফেসবুক আইডিতে খুঁটিতে বাঁধা আজাদের ছবি পোস্ট করেন।
ফেসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন ‘তাকিয়া বাজারে আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে ধরা খেয়েছে স্বর্ণ চোর। রাত তিনটায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে, পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ।’
খবর পেয়ে পুলিশ প্রেমিক আজাদকে উদ্ধার করে। এরপর সোনাগাজী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
মেয়ের বাবা আবদুল হাই অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দুই বছর যাবত আজাদ তার স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে উত্যক্ত করে আসছে। তিনি ও তার মেয়ে বিয়ে ও প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজাদ রোববার রাতে সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তার কন্যাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তিনি ও তার ছেলে মিলে আজাদকে আটক করে রশি দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। তার ছেলের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার ছেলের লাঠির আঘাতে আজাদের মাথা ফেটে যায়। তিনি আজাদকে একমাত্র আসামি করে তার স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।
অপর দিকে আজাদের পিতা বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন, আবদুল হাইয়ের কন্যাকে প্রাইভেট পড়ানোর সূত্র ধরে তার ছেলের সাথে ওই স্কুল ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। রোববার মেয়েটির জন্মদিন ছিল। মেয়েটি বিষয়টি তার ছেলেকে জানালে সে দুই প্যাকেট লজেন্স ও একটি কলম উপহার নিয়ে তাঁর বাড়িতে যায়। রাতে সেখানে খাওয়াদাওয়াও করে। কিন্তু, গভীর রাতে তার ছেলেকে নির্মমভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আহত করে আব্দুল হাইয়ের পরিবার। দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে কথিত স্বর্ণ চুরির অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিও ছড়িয়ে দেয়। তাই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্কুল ছাত্রীর বাবা। আর খুঁটির সাথে বেঁধে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে ছেলের বাবা। তাদের দুইজনকে গ্রেফতার করা
হয়েছে।